রাশেদ রিমান্ডে, নুর হাসপাতাল ছাড়া কেন?

কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খাঁনকে কেন রিমান্ডে নেয়া হয়েছে জানতে চেয়েছেন রুহুল কবির রিজভী। সেই সঙ্গে ছাত্রলীগের পিটুনিতে আহত আরেক নেতা নুরুল হক নুরকে কেন হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হলো তারও জবাব চেয়েছেন তিনি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের প্রতি সরকারের আচরণে প্রমাণিত হলো যে শেখ হাসিনা যাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন তাদের ভিটে-মাটিতে ঘুঘু চরিয়ে দিতে মোটেই দ্বিধাবোধ করেন না।’

মঙ্গলবার নয়াপল্টনে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন রিজভী।

সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে না, গত ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করতে দাবি জানিয়ে আসছিল আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা।

এর মধ্যে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক গত ২৭ জুন এক ভিডিওবার্তায় তার ‘রক্ত গরম’ হয়ে গেছে উল্লেখ করে আবার আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান। বলেন, তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

রাশেদ এমনও বলেন, ‘মনে হচ্ছে, তার বাপের দেশ, সে একাই দেশের মালিক, ইচ্ছামতন যা ইচ্ছা তাই বলবে আর আমরা কোন কথা বলতে পারব না।’

রাশেদ প্রবাসীদেরকে এমনও বলেন, তাদের পাঠানো রেমিটেন্স ভিন্নখাতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এই ভিডিওবার্তার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠে পরিস্থিতি। কোটা আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। একটি মামলার পর গ্রেপ্তার হন রাশেদ। সোমবার তাকে নেয়া হয় পাঁচ দিনের রিমান্ডে। অবশ্য রাশেদ রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে দাবি করেছন, ‘বাপের দেশ’ কথাটি তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেননি।

রিজভী তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের ছাত্র নেতা রাশেদ কোন অপরাধের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড খাটছে?’

ছাত্রলীগের পিটুনিতে আহত নুরুল হক কেন হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন না, সেই প্রশ্নও সামনে আনেন বিএনপি নেতা।

গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নুরকে বেদম পেটায় ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে তাকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে।

কিন্তু এই চিকিৎসালয় থেকে চাপের মুখে নুরকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠে। পরে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে নিয়ে যান স্বজনরা।


রিজভী বলেন, ‘ধারালো অস্ত্রে মারাত্মকভাবে আহত কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্রনেতা নুরু যাতে চিকিৎসা না পায়, সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা হানা দেয়। চিকিৎসা না দিয়ে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেও তাকে বের করে দেয়া হয়। সে গতকালও সাংবাদিকদের সামনে বাঁচার আকুতি জানিয়েছে।’

শনিবারের হামলার প্রতিবাদে গত সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচিতেও হামলা হয়েছে।

রিজভী বলেন, ‘ছাত্রীদের যেভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে তা নারীদের ওপর ’৭১ এর হানাদার বাহিনীর নির্মতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।’

‘গতকাল সেখানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা রড, হাতুড়ি, বাঁশের লাঠি দিয়ে যেভাবে সাপ মারার মতো যেভাবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে তাতে আওয়ামী লীগের সেই লগি-বৈঠার তাণ্ডবের কথাই মনে করিয়ে দেয়।’

‘ছাত্রলীগের নামের সাথে ছাত্র নামটি জুড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ গোটা ছাত্র সমাজকেই অপমানিত করেছে। ভোগ, লালসা, দাপট, খুন, জখমের চেতনায় বর্তমান ছাত্রলীগকে গড়ে তোলা হয়েছে।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘নৈরাজ্যের বিভিষীকায় দেশ নিমজ্জিত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই রক্তে রঞ্জিত। ছাত্রীদের ওপর লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের হিড়িক এক আতঙ্কজনক মাত্রা লাভ করেছে।’

২০১৪-১৫ সালে এই সরকার পুলিশ-র‌্যাবকে দিয়ে একইভাবে বিএনপির আন্দোলন চলাকালে গুম আর বিচারবহির্ভুত হত্যার হিড়িক শুরু করেছিল বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও তাঁর র‌্যাব-পুলিশের হাত কত নিরপরাধ মানুষের রক্তে রঞ্জিত তা বলে শেষ করা যাবে না।’

কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা প্রতারণা বলেও দাবি করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে প্রায় দুই মাস আগে জাতীয় সংসদে সম্পূর্ণরুপে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। আসলে সেদিনই আমরা বলেছিলাম-এই ঘোষণা একটি নাটক ও ছাত্র আন্দোলনের প্রতি প্রতারণা। এখন সেটি অক্ষরে অক্ষরে দৃশ্যমান হচ্ছে।’

‘আসলে সেদিন প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে জনরোষ থেকে বাঁচতে প্রতারণার কৌশল নেন।’

কুমিল্লায় নাশকতার এক মামলায় আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করারও সমালোচনা করেন রিজভী। বলেন, হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আপিল বিভাগ স্থগিত করা নজিরবিহীন ঘটনা। এটি সম্পূর্ণরুপে সরকার নির্দেশিত। অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে সরকারের মুখপাত্রে পরিণত করার বন্দোবস্ত করছেন বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।